আফগানিস্তানের শাসনভার তালেবানদের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় দেশটির ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভারত ক্রিকেট বোর্ড। বিষয়টি নিয়ে খুব শিগগিরই আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় ভারত ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। এদিকে আইপিএল খেলার জন্য ইংল্যান্ডে অবস্থানরত রশিদ খান এবং মোহাম্মদ নবীকে আনতে চার্টার্ড বিমান পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
নানা প্রতিবন্ধকতা আর সুযোগ সুবিধার অপ্রতুলতার মাঝেও আফগানিস্তান ক্রিকেটের উত্থানটা বিস্ময়কর। মাত্র এক যুগের ওয়ানডে ইতিহাসে তাদের সফলতার গল্পটাও ঈর্ষণীয়। আর টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব মোড়লরাও ওদের ভয় করে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় আবারও স্থবির হওয়ার পথে আফগান ক্রিকেট।
আফগানিস্তানে ক্রিকেটের গোড়াপত্তন অষ্টাদশ শতাব্দীতে। তবে ব্রিটিশ উপনিবেশে তাদের ছিলো না কোন গৌরবোজ্জ্বল ইতহাস। পরবর্তীতে পাকিস্তানি উদ্বাস্তুদের মাধ্যমে দেশটিতে আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠে ক্রিকেট। ১৯৯৫ সালে বোর্ড গঠনের পর তৈরি হয় নতুন সম্ভাবনা। তবে কট্টরপন্থী তালেবানদের কারণে খেলাটির বিস্তৃতি ছিলো সীমিত।
২০০১ সালে তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পরই মূলত দেশটিতে ক্রিকেট জাগরণের উত্থান। এর বছর দুয়েক পর আইসিসির সদস্যপদ পায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। যার পরের গল্পটা রূপকথার মত। ২০০৯ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর যে গল্পে যোগ হয়েছে একের পর এক অধ্যায়।
বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়ই আফগান ক্রিকেটর মূল শক্তি। যাদের মধ্যে সবার আগে আসে লেগ স্পিনার রশিদ খানের নাম। যার সক্ষমতা আর সম্ভাবনা তাক লাগানোর মতো। তরুণ মুজিব উর রহমান আর কায়েস আহমেদ ওদের ক্রিকেট বিস্ময়। এ ছাড়াও অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবী, হজরতউল্লাহ জাজাই, নাজিবুল্লাহ জাদরানদের নিয়ে দারুণ একটা দল আফগানিস্তান। তবে ভাগ্যটাই খারাপ বলতে হবে দেশটির ক্রিকেটের। কেননা খেলা বিদ্বেষী কট্টর তালেবানরা আবারও আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে। সঙ্গে যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতি তো আছেই। এমন অবস্থায় দেশটির ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট তো সম্ভবই না। বরং যারাও খেলেছে তাদেরও পরিকল্পনা দেশ ত্যাগ করার।
দ্য হান্ড্রেড টুর্নামেন্ট খেলতে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন রশিদ খান এবং মোহাম্মদ নবী। সেখানে থেকেই সামাজিক মাধ্যমে তাদের উৎকণ্ঠা আর শঙ্কার কথা সামজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন দুজন। বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আফগানদের বাঁচানোর। যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রশিদ-নবী রক্ষা পেলেও, তাদের সতীর্থরা আফগানিস্তানে আছে চরম অনিশ্চয়তার মাঝে। ফলে মাস দুয়েক পর শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টিতে ওদের অংশগ্রহণ নিয়ে আছে শঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে এসিবির পাশে দাঁড়াতে চায় ভারত ক্রিকেট বোর্ড। বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে দু'পক্ষ।
হান্ড্রেড টুর্নামেন্ট শেষে দেশে ফেরার পরিকল্পনা নেই রশিদ খান আর মোহাম্মদ নবীর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা থাকছেন নির্বাসনে। এমতাবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে হতে যাওয়া আইপিল সম্ভাবনাও শূন্যের কোটায়। তবে বিসিসিআই ইংল্যান্ড থেকে তাদের আনতে চার্টাড বিমান পাঠাতে চায়।
বর্তমানে ইংল্যান্ড সফরে রয়েছে বিরাট কোহলিরা। সিরিজ শেষ করে আইপিএলের বাকি অংশ খেলতে সবাই পাড়ি জমাবে আরব আমিরাতে। তাদের সঙ্গে একই বিমানে করে আফগান ক্রিকেটারদের মধ্যপ্রাচ্য যাওয়ার অফার দিয়েছে ভারত। তবে হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলা মুজিবুর রহমান কি করবেন, তা নিশ্চিত করতে পারেনি কোনো পক্ষ।
আরও পড়ুন
Tags:
sports